Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান
বিস্তারিত

ইসলামের ইতিহাসে ঐতিহ্যবাহী আরাফাতের ময়দান। সেখানে সব ভেদাভেদ ভুলে এক স্রোতে মিশে গিয়েছেন লাখো হজযাত্রী। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। সমস্বরে তারা উচ্চারণ করেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই। প্রায় ২৩ লাখ হজযাত্রীর সমস্বরে উচ্চারিত এ ধ্বনি গতকাল আরাফাতের ময়দান মুখরিত করে তোলে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, এখানে দাঁড়িয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। তার ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে ইসলাম। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করে সারা বিশ্ব থেকে যাওয়া হজযাত্রীরা হৃদয় বিগলিত কান্নায় ভেঙে পড়েন। আল্লাহর নৈকট্য, নবীজির শাফায়াত কামনা করেন। নিজেকে, পরিবারকে, দেশ, দুনিয়া সমস্ত কিছু ভুলে তারা এক আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিলেন। উচ্চস্বরে বললেন- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই। আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে বিশ্ব মুসলিমের জন্য খুতবা পাঠ করেন সৌদি আরবের প্রধান মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল আশেকি। এ সময় তিনি বিশ্ব শান্তি কামনা করেন। টানা ৩৫ বার তিনি এ খুতবা পাঠ করলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল আশেকি। কিন্তু তার মা তার জন্য প্রার্থনা করেন- অবশ্যই আল্লাহর অশেষ করুণা বর্ষিত হবে তার ওপর। হয়তো মায়ের সেই দোয়া কবুল করেছেন আল্লাহ। তাকে দিয়েছেন আরাফাতের ময়দানে টানা ৩৫ বার খুৎবা দেয়ার সৌভাগ্য। এদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজযাত্রীরা অবস্থান করেন আরাফাতের ময়দানে। তারা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থেকে সময় পার করেন। এখানে উল্লেখ্য, আরাফাতের ময়দানে যে স্থানটিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানেই গড়ে উঠেছে মসজিদে নামিরা। সেখানে হাজির হতে পেরে নিজের জীবনকে সার্থক মনে করেন হজযাত্রীরা। এ মসজিদে একই সঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। দু’টুকরো সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধা হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে আদায় করেন এ নামাজ। এ সময় আল্লাহর করুণা প্রার্থনা করে মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে আল্লাহর দরবারে গুনাহ মাফ চান। গতকাল ভোর থেকে পবিত্র মিনা থেকে লাখ লাখ হজযাত্রী গিয়ে সমবেত হন আরাফাতের ময়দানে। এর আগেই মঙ্গলবার শুরু হয়ে যায় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। ওইদিন লাখ লাখ হজযাত্রী তীব্র গরম ও বাতাসের আর্দ্রতা উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে, বাসে করে অথবা অন্য কোন যানে করে সমবেত হতে থাকেন মিনায়। এর আগে তারা চুল কামান। হাতের ও পায়ের নখ পরিষ্কার করেন। তারপর গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করেন। এরপর তারা সাদা কাপড়ে ইহরাম বাঁধেন। আদায় করেন দু’রাকাত নামাজ। নিয়ত করেন হজের। তারপরই তারা মুহুর্মুহু ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা’ জপতে থাকেন। গতকাল ভোর থেকেই তারা সমবেত হতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে। সেখানে আদায় করেন জোহর ও আসরের নামাজ। সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত তারা এখানে ইবাদত-বন্দেগি করেন। সূর্যাস্তের পর তারা চলে যান মুজদালিফায়। সেখানে একসঙ্গে আদায় করেন মাগরিব ও এশার নামাজ। শয়তানকে মারার জন্য সংগ্রহ করেন পাথর। ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেন সারারাত। আজ তারা জামারাতে গিয়ে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপ করবেন। তারপর কোরবানি করবেন। চুল, দাড়ি শেভ করবেন। এরপর তারা ইহরাম খুলে ফেলতে পারবেন। এখান থেকে হজযাত্রীরা যাবেন পবিত্র মক্কায়। সেখানে পবিত্র কাবা ঘরকে তাওয়াফ করবেন। মাকামে ইব্রাহিমে আদায় করবেন ২ রাকাত নামাজ। পান করবেন পবিত্র জমজমের পানি। ফিরে আসবেন মিনায়। মসজিদে নামিরায় শেখ আবদুল আজিজ আল আশেকি তার খুতবায় বলেন, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে এই খুতবা দিচ্ছি, ঠিক এখানে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) দাঁড়িয়েছিলেন। এখান থেকেই তিনি সাহাবীদের উদ্দেশে দিয়েছিলেন বিদায় হজের ভাষণ। সেই রীতি অনুসরণ করে আমি আজ শুধু লাখো হজযাত্রীর উদ্দেশে খুতবা দিচ্ছি না, এ খুতবা মুসলিম বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মুসলমানের জন্য। শেখ আবদুল আজিজ আল আশেকির বয়স এখন ৭৪ বছর। তিনি হিজরি ১৪০২ সাল থেকে আরাফাতের ময়দানে খুতবা দেয়া শুরু করেন। তার জন্ম হয়েছিল সৌদি আরবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। মক্কার আল আশেকি পরিবারে তার জন্ম ১৯৪১ সালে। তিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে পবিত্র কুরআন মুখস্থ করেন। তার বয়স যখন ৮ বছর তখন মারা যান তার পিতা। শেখ আবদুল আজিজ আল আশেকি শৈশবেই দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন। কিন্তু তাতে তার জ্ঞান অর্জনের নেশা থেমে থাকেনি। রিয়াদে সায়েন্টিফিক প্রোপাগেশন ইনস্টিটিউটে গ্রাজুয়েট ছাত্র থাকা অবস্থায় পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারান। ১৯ বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে তিনি যোগ দেন রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির অধীনে শরিয়া কলেজে। অর্জন করেন আরবি ভাষা ও শরিয়া সায়েন্সে ডিগ্রি। রিয়াদ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড শরিয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি রিয়াদে ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরাফাতের ময়দানে দেয়া খুতবা তাকে প্রস্তুত করতে দু’মাসেরও বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। পবিত্র রমজান মাসের পরেই তিনি এ কাজ শুরু করেন।

ছবি
ছবি
ডাউনলোড