Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
অবসর ভাতা পেতে অসহনীয় ভোগান্তিতে বেসরকারী শিক্ষকরা
বিস্তারিত

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় পার করেছেন যেসব শিক্ষক, বৃদ্ধ বয়সে তাদের বেশিরভাগেরই এখন দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। অবসর ভাতা পেতে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হচ্ছে। জীবদ্দশায় অনেকের কপালে জোটে না অবসর ভাতা। সারাজীবন তারা সমাজে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়েছেন।

 

কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে একরকম বিনা চিকিত্সায় মারা গেছেন। অনেকে রোগে শয্যাশায়ী রয়েছেন, আবেদন করে খোঁজও নিতে পারছে না। অনেকে বছরের পর বছর ঘুরে টাকা পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, উপার্জনের কোনো পথ খোলা না থাকায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হয় অবসর ভাতার দিকে। কিন্তু সেখানেও যেন চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, সংসারে খুব টানাপোড়েন চলছে। মেয়ের বিয়ের সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তা এখনও পরিশোধ হয়নি। এরই মধ্যে অবসরে গেছেন তিনি। একমাত্র ছেলের এখনও চাকরি হয়নি। এ অবস্থায় অবসরের টাকা না পাওয়ায় কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণও বকেয়া থাকছে।

 

মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোখলেসুর রহমান অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। এই টাকা পাবার আগেই তিনি এক বছর আগে মারা যান। এখন তার স্ত্রী টাকার জন্য ঘুরছেন।  যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটি ডিগ্রি কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক প্রদ্যুত্ কুমার মল্লিকের মৃত্যুর ১ মাস ১৮ দিন পর ২৫ আগস্ট ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের হাতে পৌঁছায় অবসরভাতার ৬ লাখ ২২ হাজার ৯শ’ ৭৮ টাকার একটি চেক। চেকটি অবসর গ্রহণের ৪ বছর পর পাওয়া গেল।

 

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথকভাবে আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। ‘অবসর সুবিধা বোর্ডের’ আর্থিক সুবিধা দেয়ার জন্য চাকরিকালীন শিক্ষকদের মূল বেতনের ৪ শতাংশ এবং ‘কল্যাণ ট্রাস্টের’ আর্থিক সুবিধা দিতে ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। এছাড়া কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের প্রত্যেকটির স্থায়ী আমানত হিসাবে আড়াইশ কোটি টাকা রয়েছে। শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর এই দুই খাতের টাকা থেকে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান। ১৯৯০ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট ও ২০০৫ সাল থেকে অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে আর্থিক সুবিধা পান শিক্ষকরা।

 

প্রায় ৫ লাখ শিক্ষকের মূল বেতনের ৪ শতাংশ হারে প্রতিমাসে অবসর সুবিধা খাতের জন্য জমা হয় প্রায় ১৭ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিমাসে প্রয়োজন ৫৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাসে ৩৯ কোটি এবং বছরে ৪৬৮ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। একইভাবে ৫ লাখ শিক্ষকের মূল বেতনের ২ শতাংশ হারে প্রতিমাসে কল্যাণ খাতের জন্য জমা হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিমাসে প্রয়োজন ১৮ কোটি টাকা। মাসে সাড়ে ৯ কোটি এবং বছরে ১১৪ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে ২৫ হাজার এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের টাকা পেতে ৪৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে।

 

যে আবেদন জমা পড়ে আছে তা নিষ্পত্তি করতে অবসর সুবিধা বোর্ডের প্রয়োজন ১৫শ’ কোটি টাকা। আর কল্যাণ ট্রাস্টের সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৫শ’ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন।

 

অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন খাতে টাকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, এর দায়ভার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।

 

কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজু বলেন, এত আবেদন নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা নেই। অথচ আবেদন আসছে। নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে সংকট আরো বাড়বে। এই খাতে ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ জরুরি।

 

গত প্রায় ৪ মাস ধরে অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিবের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে কাজের গতিও থেমে গেছে। এ বোর্ডে অব্যবস্থাপনায় ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ছবি
ডাউনলোড